তোমাদের দিনলিপি

রোযনামচা
মাহমুদের রোযনামচা
 পাঠিয়েছে : মাহমুদুল হাসান
      জামিয়া রশিদিয়া আরাবিয়া, গাজীপুর

আজ ১৪/০২/১৩ ঈসায়ী।
     রোজ বৃহস্পতিবার। আমি এক আহত কলম। ক্ষত আমার দেহে নয়, হৃদয়ে। হৃদয় আমার ক্ষত-বিক্ষত জালিমের অত্যাচারে। আমি কলম। খোদার পবিত্র আমানত। আমার মাধ্যমে আল্লাহ ইনসানকে ইহসান, ইসলাম ও ইনসাফ শিক্ষা দিয়েছেন।
     আমি লিখতে চাই আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষে। কুরআন ও হাদীসের পক্ষে। ন্যায় ও ইনসাফের পক্ষে। মাজলুম মানুষের পক্ষে। আমি থাকতে চাই খাঁটি আলিমের হাতে। তালিবুল ইলম ও আল্লাহ ওয়ালা ন্যায়পরায়ণ লেখকের হাতে।
     আমি আজ জালিমের হাতে বন্দি। আমায় ব্যবহার করে তারা জুলুম-অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন করে যাচ্ছে, যারা দ্বীনের রাহবার, যাঁরা বেহেশতের সাওয়ার, তাঁদেরই উপরে। আমি মেনে নিতে পারছি না নাস্তিক-মুরতাদের কঠিন নির্যাতন। আমায় উদ্ধার করো। আমার হৃদয়ের রক্ত ক্ষরণ বন্ধ করো।
     কথা দিচ্ছি, জালিমের হাত থেকে
আমায় উদ্ধার করে আমার সঠিক ব্যবহার শুরু করো। ইসলামের নূরুন তোরণ দিয়ে শান্তির তরুণ অরুণ উদিত হবেই।

নূরানার রোযনামচা
 নূরানা বিনতে আবু বকর সিদ্দীক (৪৪)

০৫/০৪/১৪৩৪ হিজরী।
     অনেকের সাথেই চলেছি। অনেক কিছু দেখেছি। অনেক কিছু অনুভব করেছি। অনেক কিছু পেয়েছি। কিন্তু কোথাও পাইনি একটু আলোর হাতছানি; পাইনি একটি সুপথগামী কলম। যে আমায় দেবে পথের দিশা, নিয়ে যাবে আলোর রাজত্বে। অনেক পত্রিকা পড়েছি। দুটির সদস্য কূপনও পূরণ করেছি। অনেক ধরনের লেখাও লেখেছি। পাঠানোর সাহস হয়নি কোথাও। আজ যখন ‘মাসিক হিকমাহ’ হাতে এলো তখন মনে হলো এটাই মনে হয় আমার জীবনে আলোর হাতছানি। যা আমায় সত্যিই নিয়ে যাবে আলোর রাজত্বে। তাই ভাবলাম, আর বসে থাকা যাবে না। এটাই আমার মোক্ষম সুযোগ আর কাঙ্খিত সময়। তাই অনেক সাহসে ভর করে হৃদয়ের গভীর থেকে লিখে ফেললাম এই কথাগুলো। আল্লাহ আমাকে সহ হিকমাহ এর সকল বন্ধুদের কলম সৈনিক হিসাবে কবুল করুন। আমীন!
তোমার কথাগুলো কি মনের, না মুখের? মনের হয়ে থাকলে হিকমাহ -এর দরোজা তোমার এবং যারা তোমার মত করে ভাবে সবার জন্য সব সময় খোলা। যদি মনের না হয়ে থাকে অবশ্যই তুমি লেখা না পাঠিয়ে চুপটি মেরে বসে যাবে। মনের হলে তোমার আরও পাঁচজন সাথীর লেখা আসবে।

রাবুর রোযনামচা
রাবিয়া বিনতে ইদরীস (৪৫)

আজ ০১/১২/১৪৩৩হিজরী। 
কুরবানীর ছুটি শুরু হয়েছে। সাথীদের থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি চলে এলাম। ভাবলাম এতদিন ভালো ঘুম হয়নি। অনেক ঘুম আটকা পড়ে আছে। এগুলোকে মুক্তি দিতে হবে। তাই একটু ভালো করে ঘুমিয়ে নেব। যেই ভাবা সেই কাজ। যোহর আদায় করে দিলাম এক ঘুম। আছরের সময় ওঠে আছর ও পরে মাগরিবের নামায আদায় করে দিলাম আরেক ঘুম। আহ! ঘুম যে এত্ত মজাদার! যতই ঘুমাই ততই মজা লাগে।
     অবাক কান্ড তো! যত ঘুমাই ততই আরো ঝেঁকে বসে চোখে। আমি চাইলাম ওদের বন্দিশালা থেকে মুক্ত করতে আর ওরা চায় ওদের দেশে আমাকে বন্দি করে রাখতে। তার চেয়ে ভালো ওরা আটকাই পড়ে থাক আর শ্বাসরুদ্ধ হয়ে একদিন মরে যাক।
     ওরা তো আর আমার বন্ধু নয়; বরং শত্র“ই বটে। বই-পুস্তক খুলতে দেখলেই হলো, দৌড়ে ছুটে আসবে আমার কাছে। বসবে একদম আমার মাথায়, আর ঠোঁয়া দেবে বারবার। মাঝে মধ্যে এমন জোরে ঠোঁয়া মারে যে, টেবিলের সাথে বাড়ি খেয়ে আমার চশমাটায় ভাঙ্গার দশা।
বোন! তুমি বুঝি চশমা পরো? চশমার আক্রমণ থেকে বাঁচতে ‘স্বাস্থ্য কণিকা’টি ভালো করে পড়ো এবং আমল করো। তোমার সাথী ও পরিচিত জনদেরও এর উপর আমল করতে বলো। এতে তুমি খেদমতে খালকের সাওয়াব পেতে থাকবে।

উনাইছার রোযনামচা
উনাইছা জান্নাত বিনতে আব্দুল বাছীর (১৯)

আজ ১১ জুমাদাল উলা ১৪৩৪ হিজরী।
 রবিবার। বড় খালামণি অনেক মজার পিঠা বানিয়েছেন। ছিটা-পিঠা। আম্মু আমাকে পিঠা দিলেন খেতে। সাথে দেশি মুরগীর তরকারী। অনেক মজা করে খাচ্ছি।  সাথে বসেছে ফাহিমা আপুর মেয়ে আকসা। একটু পরে শামিল হয়েছে রুমা খালার ছেলে মুয়ায বিন মনযিল এবং আমার বোন রুফাইদা। সবাই মিলে খুব মজা করে খাচ্ছি। এমন সময় রুমা খালামণি এলেন তাঁর মেয়ে মুশরিফাকে কোলে নিয়ে। সেও বসেছে আমাদের দেখাদেখি। বসে মুখে দিয়েছে এক টুকরো। ইশ! ঝালে তার মুখ বাংলা পাঁচের (৫) মত হয়ে গেছে। এরপরই ঘটল ঘটনাটা। সে ওয়াক্ ওয়াক্ করে সব ফেলে দিল আমাদের ডিশে। নিচের দিকে ভেজা লাগলে তাকিয়ে দেখি সে ইয়েও করে দিয়েছে। আমরা সকলেই একযোগে চেচামেচি শুরু করে দিলাম। রুমা খালামণি মুশরিফাকে পরিষ্কার করে সুহাইমার কাছে শুয়ালেন, ওখানে ছিল হাফসাও। কিছুক্ষণ পর- ওরা তিন জন ঘুমুচ্ছে আরামে।
     আমরা বায়না ধরলাম, আবার পিঠা বানিয়ে দিতে হবে। বায়না মতে রাতের বেলা আবার ‘ছিটারুটি’ বানিয়ে দিলেন বড় খালামণি। রুটি আর বুটি (গোশত) নিয়ে এক রুমে ঢুকে ভেতর থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে দিলাম। প্রবেশাদেশ সংরক্ষিত। এক সাথে বসে খাচ্ছি...। কী মজা! কী মজা!! আজও মনে পড়ে সেদিনের কথা।

তাকলিমার একগুচ্ছ রোযনামচা
[এখানে একগুচ্ছ ছোট ছোট রোযনামচা তুলে ধরছি। লেখার ভুবনে যারা নতুন তাদের কাজে লাগবে।]

॥ ফুল ॥
১১/০৩/২০১৩ ঈসায়ী
     আমাদের বাড়ীতে ফুল গাছ আছে। ফুল আমার প্রিয়। আমি ফুল ভালোবাসি। ফুলও আমায় ভালোবাসে। আমায় দেখলেই সে মিষ্টি করে হাসে। আমিও হাসি। আমি ফুলের সৃষ্টিকর্তাকে ভালোবাসি।
॥ ফল ॥
১২/০৩/২০১৩ ঈসায়ী
     আমি ফল খাই। ফল খেতে আমার ভালো লাগে। আমাদের বাড়ীতে অনেক রকম ফল গাছ আছে। আম, জাম, পিয়ারা, কাঁঠাল, চালতে, কামরাঙ্গা, জলপাই, পেপেসহ অনেক গাছ। আরও আছে লেবু, বিলম্বি, করমচা ও বেলুন মরিচ এর গাছ। আমি গাছের সৃষ্টিকর্তাকে ভালোবাসি।
॥ বত্তা শাক ॥
১৩/০৩/২০১৩ ঈসায়ী
     আমাদের বাড়ীতে একটি উদ্ভিদ (শাক) আছে। আঞ্চলিক ভাষায় একে ‘বত্তা’ বলে। এই শাক সাধারণত সরিষা ক্ষেতে হয়। এর উচ্চতা প্রায় ৭/৮ ইঞ্চি। বর্তমানে এগুলো দেখা যায় না। স্মৃতি ধরে রাখা আমার সখ। ছোট আপুরও। তাই একদিন একটি ‘বত্তা’ পেয়ে বাড়ীতে রোপন করে ফেললাম। এটি বড় হল। ফুল এল। ফুল থেকে বীজ সংগ্রহ করে আবারও বুনন করলাম। এখন অনেক বত্তা। এর মধ্যে একটি বত্তার উচ্চতা তিন ফুট ৭ ইঞ্চি। কী মজা!
॥ ঘড়ি ॥
১৪/০৩/২০১৩ ঈসায়ী
     আমার একটি ঘড়ি আছে। কালো ফিতার ঘড়ি। ঘড়িটি আমার খুব প্রিয়। কাটাওয়ালা ঘড়ি। সে টিকটিক করে আমায় ঠিকঠিক সময় বলে দেয়।
॥ জায়নামায ॥
১৫/০৩/২০১৩ ঈসায়ী
     আম্মুর একটি জায়নামায আছে। সবুজ জায়নামায। এতে মক্কা শরীফের ছবি আছে। মদিনা শরীফেরও। আম্মু ওটাতে নামায পড়েন। তিলাওয়াত করেন।  তাসবীহ পড়েন। মাঝেমধ্যে আমিও নামায পড়ি। অনেক ভালো লাগে।
॥ চাঁদ ॥
১৬/০৩/২০১৩ ঈসায়ী
     আকাশে চাঁদ উঠে। প্রথম অবস্থায় খুব চিকন থাকে। প্রতিদিন একটু একটু করে মোটা হয়। পূর্ণিমাতে গোলাকার ধারণ করে। পৃথিবী আলোকিত হয়। চাঁদের স্নিগ্ধ আলো আমার খুব ভালো লাগে। আমি চাঁদের স্রষ্টাকে ভালোবাসি।
॥ সূর্য ॥
১৭/০৩/২০১৩ ঈসায়ী
     প্রতিদিন ভোরে সূর্য উঠে। সূর্যের মিষ্টি আলোয় চারিদিক ঝলমলিয়ে উঠে। সময় যত বাড়তে থাকে তার তেজ ততই বাড়তে থাকে। দ্বি-প্রহরের পর সূর্য ঢলে পড়ে। যোহরের শেষ সময় থেকে সূর্যের তেজ কমতে থাকে। সন্ধ্যায় পৃথিবীকে আঁধারে ডুবিয়ে নিজেও দেই ডুব। আমি সূর্যের সৃষ্টিকর্তাকে ভালোবাসি।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন