তোমাদের লেখা

আমাদের দেখা
 বোন সামিয়াহ্ বিনতে শাহাদাত
     দাওরা : সিদ্দীকিয়া মহিলা মাদরাসা
     মিরপুর, ঢাকা

 লেখার প্রতি তোমার মমতাকে সাধুবাদ জানাই। তুমি ‘অব্যক্ত কিছু কথা’ নামে উপদেশমূলক একটি গল্প পাঠিয়েছো। তেইশ লাইনের গল্পটিতে বানান ভুল রয়েছে তেইশটি; লাইনের সমান সংখ্যক। শব্দভুল রয়েছে কিছু। ব্যাকরণেও রয়েছে কিছু ভুল। সাধু-চলিত ভাষার মিশ্রণও ঘটেছে তোমার লেখায়। ভুলের কথা পড়ে মনে হয় মাথায় হাত দিয়ে বসেছো। তা, হাত নামাও।
     আশার বিষয় হচ্ছে, তোমার লেখার ভাষ্য ফুটে উঠেছে চমৎকার। বুঝা-ই যাচ্ছে তুমি নিয়মিত রোযনামচা লেখো না। নিয়মিত রোযনামচা লিখলে তোমার লেখায় ঈর্ষার খোরাকী পাবে সাথীরা। তাই আজ থেকে আর অলসতা নয়; নিয়মিত রোযনামচা লেখো। আর হাঁ, লেখার সময় কাছে একটি অভিধান রাখবে। অনিশ্চিত প্রতিটি শব্দের বানান দেখে নেবে অভিধানে। প্রতিদিন কম পক্ষে তিনটি শব্দের বানান শিখবে। মাস শেষে দেখা যাবে প্রায় ১০০টি শব্দের বানান এসে গেছে তোমার দখলে। বছর শেষে দেখা যাবে প্রায় ১৫০০ শব্দের বানান তোমার দখলে। কয়টি শব্দ আর ব্যবহার করো তোমার কথা-বার্তায়? বুঝেছো?

 বোন তাহমিদা বিনতে নাযিমুদ্দীন
     সপ্তম : কেনা ইসলামিয়া মাদরাসা
     বিজয়নগর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া।

 লেখার তোরণে তরুণ অরুণ হিসাবে তোমাকে স্বাগতম। মোবারকবাদ জানাই লেখার প্রতি তোমার ভালোবাসাকে। তুমি ‘অহঙ্কারের পরিণাম’ শিরনামে একটি লেখা পাঠিয়েছো। তোমার গল্পের সারাংশ তুলে ধরলাম- “মাহমুদ সাহেব অনেক বড় লোক। তাঁর একটি কোম্পানী আছে। তিনি কোম্পানীতে শিয়ার নেয়ার জন্য পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। শিহাব সাহেব বিজ্ঞপ্তি পড়ে শিয়ার কিনতে চলে এলেন মাহমুদ সাহেবের বাসায়। কমিটমেন্ট হয়েছিল আগেই। তিনি খুব ভদ্র-বিনয়ী ও নামাযী। পল্লী-গ্রামের একজন উন্নয়নশীল ব্যবসায়ী। সাথে নিয়ে এলেন তাঁর ফ্যামিলি মেম্বারদের। এসেই কলিংবেল টিপলেন। দরোজা খুললেন মাহমুদ সাহেবের স্ত্রী হাসিনা। টুপি-পাঞ্জাবী পরিহিত এক লোক, সাথে বোরকা পরা এক মহিলা দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলেন তিনি। জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘কারা আপনারা! কি চান এখানে?’
-সাহেব আমাদের দাওয়াত করেছেন।
-‘ওহো, আপনি তাহলে গ্রামের বুদ্দো! আমি এ রকম নিচু শ্রেণীর লোকদের শিয়ার নেব না।’ বললেন মাহমুদ সাহেব। তাদেরকে ভেতরে নেবার সৌজন্যটুকুও দেখালেন না।
-‘ঠিক আছে, আমরা চলে যাচ্ছি।’ বলে বের হলেন শিহাব সাহেব। বিড় বিড় করে বললেন ‘আল্লাহই বড় বিচারক।’
     শিহাব সাহেব এক দিন অনেক বড় লোক হলেন। বর্তমানে তাঁরও একটি কোম্পানী আছে। তিনিও পত্রিকায় শিয়ার নেবার বিজ্ঞপ্তি দিলেন। মাহমুদ সাহেব শিয়ার কিনতে চাইলেন। এই কোম্পানীতে শিয়ার কিনতে না পারলে তাঁর কোম্পানী ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। তাই তিনি টুপি-পাঞ্জাবী পরে চলে গেলেন শিহাব সাহেবের কাছে। বড় বিনয়ভরে স্বস্ত্রীক দাওয়াত দিলেন শিহাব সাহেবকে।
     শিহাব সাহেব স্ত্রীসহ আসলেন মাহমুদ সাহেবের বাসায়। কলিংবেল টিপলেন। দরোজা খুললেন আপাদমস্তক আবৃতা এক মহিলা। বললেনঃ ‘আসুন, ভেতরে আসুন।’ ভেতরে গেলেন তাঁরা। নামাযের পর সকলেই দস্তরখানে বসলেন খেতে। মেহমানখানায় পুরুষ আর অন্দরমহলে নারীরা। তাদের ভদ্রোচিত ব্যবহারে মুদ্ধ হলেন শিহাব সাহেব ও তাঁর স্ত্রী নূরানা। মনে মনে ভাবলেন, ‘আল্লাহ বুঝি ওদের হিদায়াত করেছেন।’ তাঁরা বিদায় নিলেন। বিদায়ের সময় সে কি হৃদয়গ্রাহী পরিবেশ! নূরানা গাড়ীতে উঠে বসলেন। চুক্তিপত্র সাথে নিয়েই এসেছিলেন শিহাব সাহেব। বাংলো ঘরে বসে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর হলো।
     এ ফাঁকে হল কী! মাহমুদ সাহেবের পরিবারের লোকদের দম বন্ধ হয়ে আসছিল এই মিথ্যা অভিনয় করতে। শিহাব সাহেবরা বের হতে না হতেই তারা ইসলামী লেবাস বাদ দিয়ে আবার অশালীন লেবাস ধারণ করল। মাহমুদ সাহেবের ছেলে বললঃ
- ‘আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল।’
- ‘আরে, আমার যে কী অবস্থা হয়েছিল সারা গায়ে কাপড় জড়িয়ে রাখতে।’ বলল সাহেবের মেয়ে। টিভি ছেড়ে দিল ও।
- ‘হয়েছে, হয়েছে, আমি যে এখনো কাপড় ছাড়তে পারি নি।’ অর্ধনগ্ন হতে হতে বলল সাহেব-পতœী।
- ‘আচ্ছা, ডাইনিং টেবিল ছেড়ে দস্তরখানে বসে খানা খাওয়ার প্রাকটিস্টা আগে করাও নি কেন? আমি কিন্তু বলেই ফেলছিলাম, মা আমি ডাইনিং-এ খাব। যত্তসব।’ বলল সাহেবের ছিঁটকে মেয়ে শীলা।
     ওর কথা শুনে সকলেই হাসতে হাসতে পড়ি কী মরি অবস্থা। এমন সময় শিহাব সাহেব হঠাৎ ঢুকলেন ওই কামরায়। এসেছিলেন ভাবীর কাছ থেকে সৌজন্য বিদায় নিতে। তিনি ঢুকতে ঢুকতে শীলার কথাগুলো শুনে ফেলেছিলেন। এখন ঘরের অবস্থা দেখেতো তাঁর বুঝার কিছুই বাকী নেই। মাহমুদ সাহেব তো জিহ্বায় কামড় দিয়ে, দিলেন মাথায় হাত। শিহাব সাহেব সকলের সামনেই চুক্তিনামা ছিড়ে ফেলে বললেন, ‘আপনারা আসলেই অভদ্র। এমন লোকদের সাথে সৎ ব্যবসা হয় না।’ একথা বলে চলে গেলেন তিনি।
     আমার সব গেল। তোমরা কি ওদের বিদায় করা পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করতে পারলে না? আসলেই তোমরা অভদ্র। তাঁর সাথে শিয়ার থাকতে না পারলে যে আমার কোম্পানীর বারোটা বাজবে। মাহমুদ সাহেব তার ভুল বুঝলেন; তাওবা করলেন। খাঁটি মানুষ হয়ে গেলেন পরে। হালাল পথে চলে সুখ-শান্তিতে জীবন কাটাতে লাগলেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন