তোমাদের কলম


আমাদের মলম
পাঠিয়েছে : মাঞ্জুরুল হাসান সিফাত
দিদার হাফিজিয়া মাদরাসা, কুমিল্লা

      তোমার নামটি বুঝি সিফাত! ভারী সুন্দর নামতো; মিষ্টিও অনেক। তোমার ‘বিয়ের অনুষ্ঠান’ গল্পটির কিছু অংশ তুলে ধরছি। “... মুহিম ভাইয়ের শুভ বিয়েতে যাওয়ার উদ্দেশে ঘর থেকে বের হয়েছি। পেছনে কার যেন পদ আওয়াজ শুনতে পাইয়াছি; তাকিয়ে দেখি ভাইয়া। ... আমাদের সাথে ছিল সর্বকনিষ্ঠ বোন সুমাইয়া। ... আর আধা ঘণ্টার ভেতরে পৌঁছে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।”
     শোনো! তোমার গল্পটি বেশ সুন্দর হয়েছে। তোমার লেখার ধরনে বুঝা যাচ্ছে তুমি ‘স্বভাব-লেখক’ হবে। অনেকেই আছেন স্বভাব-কবি, স্বভাব-শিল্পী; তুমিও হতে পার স্বভাব-লেখক। এজন্য তোমাকে নিয়মিত লিখতে হবে। পড়তেও হবে অনেক। অনেক বই একবার করে পড়ার চেয়ে একটি বই বার বার পড়তে হবে। পূর্ণাঙ্গ সাহিত্য মানের বই। পড়তে হবে খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে। পড়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, বানান বা ব্যাকরণ ঠিক আছে তো? শব্দ চয়ন যথার্থ হয়েছে তো? অর্থ বা তথ্যে কোন ভুল নেই তো? আরও সহজে কী তা লেখা যায়? এভাবে দেখতে হবে নিজের লেখাও।
     এবার দেখো! ‘শুভ বিয়ে’ হয় না, হবে, ‘শুভ বিবাহ’। তুমি বিয়ের খোঁজে বের হও নি নিশ্চয়-ই; বের হয়েছো বিয়েতে অংশ গ্রহণের লক্ষ্যে। এখানে ‘উদ্দেশে’ (খোঁজে) হবে না, হবে, ‘উদ্দেশ্যে’ (লক্ষ্যে)। তুমি ‘পদ আওয়াজ’ পেয়েছো! আমি কিন্তু কখনো তা পাই না। আমি পাই ‘পদশব্দ’ বা ‘পদধ্বনি’। আবার দেখো! এক জায়গায় লিখেছো ‘পাইয়াছি’। এখানে ‘পাইয়াছি’ সাধুভাষার শব্দ। তোমার পুরো লেখাটিই চলিত ভাষায়। তাই এখানে হবে ‘পেয়েছি’। একটু নিচে লিখেছো, ‘সর্বকনিষ্ঠ বোন সুমাইয়া’। তোমার কাছে ‘সর্বকনিষ্ঠ’ হলেও আমার কিন্তু ‘কনিষ্ঠ’ বোন সুমাইয়া। ‘কনিষ্ঠ’ অর্থই ‘সবার ছোট’; এক্ষেত্রে ‘সর্বকনিষ্ঠ’ বা ‘কনিষ্ঠতম’ হবে না।
     আরেকটু নিচে লিখেছো, ‘আশঙ্কা’ আছে। এতে তুমি নিশ্চয়-ই বুঝিয়েছো ‘সম্ভাবনা’ আছে। এ কথা বুঝাওনি যে, তোমার সেখানে পৌঁছে যাওয়ার ‘ভয়’ আছে। শব্দ চয়নের সময় অথবা লেখার পর সন্দেহ জনক শব্দগুলো অভিধান দেখে ঠিক করে নিতে হবে। ‘আশঙ্কা’ শব্দের অর্থ ‘ভয়’ আর ‘সম্ভাবনা’ শব্দের অর্থ ‘আশা’।
     তোমার বানান জ্ঞান সন্তুষজনক। এক জায়গায় লিখেছো ‘আকাঙ্খা’ আরেক জায়গায় ‘ভূল’। আসলে এ দু‘টি ভুল অনেক বড় জনও করেন। ‘আকাঙ্খা’ করলে পূরণ হবে না; ‘আকাক্সক্ষা’ করতে হবে। অনেকেই ‘ভুল’ লিখতে গিয়ে ‘ভূল’ লিখে ‘ভুল’ করেন। পড়া-শোনার ফাঁকে ফাঁকে নিয়মিত লিখে যাও। রোযনামচা লেখো নিয়মিত। প্রতিদিন তিনটি শব্দের বানান মুখস্ত করো। তুমি, তোমার ভাইয়া ও তোমার ছোট্ট বোনটির জীবন হোক ফুলের মতো সুন্দর।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন