এপ্রিল ফোল
মাওলানা আব্দুল হান্নান
মুসলিম সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদের নেতৃত্বে ৭১১ খ্রীষ্টাব্দে ইউরোপের স্পেনে ইসলামী পতাকা উড্ডীন করেন; এর দ্বারাই সেখানে মুসলিম সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়। তখন থেকে সুদীর্ঘ আটশত বছর ধরে সেখানে চলে মুসলমানদের গৌরবময় শাসন ব্যবস্থা। পরবর্তীতে মুসলিম শাসকগণ ভোগ-বিলাসে গা ভাসিয়ে দিলে মুসলিম সাম্রাজ্যে বিপর্যয় নামতে থাকে। খ্রীস্টান রাজা ফার্ডিন্যান্ড স্পেন এসে কঠিন প্রতিরোধের মুখে থমকে দাঁড়ান। শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজা ফার্ডিন্যান্ড বিয়ে করেন পর্তূগীজ রাণী ইসাবেলাকে। ফলে দুই বৃহৎ খ্রীস্টান শক্তি সম্মিলিত আক্রমণ করে স্পেনের উপর। ধীরে ধীরে ঘিরে ফেলে মুসলিম সভ্যতার জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্রস্থল গ্রানাডার তিন দিক। অবরুদ্ধ মুসলিমগণ এদিক-সেদিক ছুটতে থাকে বাঁচার আশায়; মহাসমুদ্রই কেবল বাকী খ্রীস্টানদের ঘেরাও থেকে। মুসলিম জাতির এই অসহায় অবস্থায় ইতিহাসের কুখ্যাত রাজা ফার্ডিন্যান্ড প্রতারণার আশ্রয় নেন। দেশব্যাপী ঘোষণা করে দেন, “যারা অস্ত্র ত্যাগ করে মসজিদ এবং সমুদ্র পাড়ের জাহাজগুলোতে আশ্রয় নেবে তাদের নিরাপত্তা দেয়া হবে।” মুসলিম জাতি সরল মনে বিশ্বাস করে মসজিদ ও জাহাজগুলোতে আশ্রয় গ্রহণ করে। পরে মানুষ নামী নরপশু মসজিদগুলোতে তালা লাগিয়ে চার পাশে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং জাহাজগুলোকে সাগরে ভাসিয়ে দেয় ডুবিয়ে। ফলে মসজিদে আগুনে পোড়া এবং পানিতে হাবুডুবু খাওয়া লাখ-লাখ নারী-পুরুষ আর নিষ্পাপ শিশুর আর্ত-চিৎকারে ভারি হয়ে ওঠে স্পেনের আকাশ-বাতাস। মূহুর্তের মধ্যে নির্মমভাবে শহীদ হয়ে যান সাত লাখ মুসলিম। এর মাধ্যমে স্পেনে আটশত বছরের মুসলিম শাসনের ইতি ঘটে আর পৃথিবীতে রচিত হয় মানবতা লঙ্ঘনের এক নির্মম অধ্যায়।
রোমান-খ্রীস্টান-ইহুদীরা পহেলা এপ্রিলে নানা অনুষ্ঠান পালন করত স্পেনের এই ঘটনাটির আগে থেকেই। তাই রাজা ফার্ডিন্যান্ড তাদের আনন্দে নতুন রূপ দিতে পরিকল্পিতভাবেই এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটান ১৪৯২ সালের পহেলা এপ্রিল। তখন থেকেই খ্রীস্টান বিশ্ব তাদের আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করল এই ধোকার মাধ্যমে।
দুঃখজনকভাবে বলতে হয়- আজ আমরা মুসলমানরাও ‘এপ্রিল ফোল’ পালন একজন অপর জনকে ধোকা দেই। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ধোকা দেয় সে আমার দলভুক্ত নয়।” তিনি আরও বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন দলের রূপ ধারণ করে, সে তাদের-ই অন্তর্ভুক্ত।” এতে প্রতীয়মান হয়, যারা বিজাতির এই সংস্কৃতি ভালবেসে গ্রহণ করবে সে তাদের সাথেই হাশরের ময়দানে উঠবে। নাউযুবিল্লাহ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন