তুলির আচর-২

যে ছবি আঁকা যায় না
মুফতী আশিকুর রহমান মাদানী
[পূর্ব প্রকাশিতের পর]

     বিজ্ঞানের এ যুগে সব কিছুই সূর্যালোকের মত পরিষ্কার করে বুঝানো যায়। কোন প্রেমিক যদি না দেখে কারো প্রেমে পড়ে; আর যদি (বর্তমানে) প্রেমিকাকে দেখাও সম্ভব না হয় তবে ওই প্রেমিক তার প্রেমিকার দর্শনের আশায় ব্যাকুল হয়ে থাকে। যদি কেউ তার প্রেমিকার গুণাগুণ, স্বভাব-চরিত্র ও দেহ কাঠামো তার কাছে বর্ণনা করে তবে সে আকুল হয়ে শুনে। এটাই তার কাছে অমৃতের মত মনে হয়।
     যাকে ভালোবাসা আল্লাহ ফরয করে দিয়েছেন। যাকে ভালোবাসতে বলেছেন বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী-পুত্র এমনকি পৃথিবীর সব কিছুর চেয়েও বেশি। যাকে আমরা মনে প্রাণে ভালোবাসি। তিনি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমরা তাঁকে দেখি নি; আর স্বচক্ষে দেখা সম্ভবও নয়।
     তবুও তাঁকে দেখতে পাগল নয় কোন সে নয়ন? তাঁকে ভালোবাসতে ব্যাকুল নয় কোন সে মন? তাঁকে জানতে আগ্রহী নয় কোন সে জন? যারা তাঁকে সত্যিই ভালোবাসেন তাদের জন্য সুসংবাদ হলো, সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেহ অবয়ব সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
     রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেহ মোবারক অধিক লম্বাও ছিল না আবার অধিক বেটেও ছিল না। তিনি নিজে সম্মানী ব্যক্তি ছিলেন এবং মানুষও  তাঁকে সম্মান করতেন। তাঁর প্রতি এই সম্মান ছিল আন্তরিক। তিনি সাধারণের চেয়ে একটু লম্বা ছিলেন। তাঁর চুল মোবারক বেশি কোঁকড়ানোও ছিল না আবার একবারে সোজাও ছিল না বরং ঈষৎ ঢেউ খেলানো ছিল। তাঁর মাথা মোবারক পরিমিত বড় ছিল। নাক মোবারক থেকে সর্বদা নূরের একটি ঝলক বিচ্ছুরিত হতো, নূর বিচ্ছুরণের ফলে একটু উঁচু মনে হতো। মুখ গহ্বর সাধারণের চেয়ে একটু বড় ছিল। দাঁতসমূহ চিরল ও সুন্দর ছিল। সামনের দু‘দাঁতের মাঝখানে একটু ফাঁকা ছিল, কথা বললে মনে হতো এই ফাঁকাটুকু দিয়ে নূর ঠিকরে বের হচ্ছে। চোখের সাদা অংশ অধিক সাদা আর কালো অংশ অধিক কালো ছিল, মনে হতো কাজল কালো চোখ। ভ্রুযুগল খুব ঘন ছিল, দুই ভ্রুরাশির মাঝখানে একটু ফাঁকা ছিল। সেই ফাঁকে একটি রগ ছিল; রাগের সময় সেটি স্ফীত হয়ে যেত। গালদ্বয় মসৃণ ছিল। দাড়ি মোবারক অনেক ঘন ছিল। তাঁর চেহারা মোবারক পূর্ণিমার চাঁদের চেয়েও বেশি ঝলমলে ছিল। (অনেকেই ভাববেন, আবেগে হয়ত বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। তা নয়; বরং যা বাস্তব তাই বলা হচ্ছে।) দুই কাঁধের মাঝখান যথেষ্ট ফাঁক ও লোমশ ছিল। সেখানে ছোট ডিম্বাকৃতির মোহরে নবুওয়ত ছিল।
বুকের উপরিভাগে লোম ছিল এবং বুক থেকে নাভী পর্যন্ত চুলের একটি সরু রেখা ছিল। এছাড়া অন্যান্য স্থানে অযাচিত লোম ছিল না। হাত ও পায়ের তালু নির্মল মাংসল ছিল। জোড়ার হাড়গুলো বেশ মোটা ছিল। হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলো পরিমিত লম্বা ছিল। কদমদ্বয় মসৃণ ছিল, পানি দিলে তা সাথে সাথে গড়িয়ে পড়ে যেত। তিনি যখন হাঁটতেন, তখন সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে হাঁটতেন। মনে হতো কোন উঁচু স্থান হতে নিচে অবতরণ করছেন। পা মোবারক জোরে উঠাতেন এবং যমিনে আস্তে ফেলতেন। দল বেঁধে হাঁটলে সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে আগে দিতেন। সাক্ষাতে আগে সালাম দিতেন। যার সাথে কথা বলতেন, পুরো শরীর তার দিকে ঘুরিয়ে কথা বলতেন। এতে বুঝা যায়, কেমন বিনয়ী ছিলেন তিনি। তাঁর দেহ মোবারকের প্রশংসাকারীগণ সকলেই এক বাক্যে বলতেন, ‘তাঁর পূর্বে এবং পরে তাঁর মতো কাউকেই দেখিনি।      
---- চলবে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন