বাঁচতে হবে-২

জাহান্নামের শাস্তি
মাওলানা শামশীর আহমদ মাদানী
 [পূর্ব প্রকাশিতের পর]

পানাহার ও নিশ্চিন্তে আত্মফুর্তিতে মত্ত হয়ে চিরস্থায়ী গন্তব্যস্থল আখিরাতকে ভুলে যাওয়ার কথা উলে−খ করে তিরস্কার করা হয়েছে। ধিক্কার দেয়া হয়েছে। কুরআনে পাকে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
ذَرْهُم يَئْاكُلُوْا وَيَتَمَتَّعُوا وَيُلْهِهِمُ الاََملُ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ ‘ছেড়ে দাও তাদেরকে, হালাল-হারাম পার্থক্য না করে অবাধে ভক্ষণ করুক এবং ফুর্তি করতে থাকুক। মনে রাখবে তারা অচিরেই নিজ কর্মফল প্রত্যক্ষ করবে এবং শেষ পরিণতি জানতে পারবে।’ তাদেরকে ভ্রান্ত আশাই উদ্দেশ্যচ্যুত করে বে খবর করে রেখেছে। অতি শিঘ্রই তাদের আমলের শেষ পরিণতি জানতে পারবে।  আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন,كلوا وَتَمَتَّعُوا قَلِيْلاً اِنَّكُمْ مُّجْرِمُوْنَ   ‘সংক্ষিপ্ত জীবনের অল্প কয়েকদিন তোমরা খাও এবং খুব ফুর্তি কর; কিন্তু মনে রেখ নিশ্চয় তোমরা অপরাধী।’
-সূরা মুরসালাত, আয়াত : ৪৬
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوا يَتَمَتَّعُوْنَ ويأكُلُونَ كَمَا تَئْكُلُ الاَنْعَامُ وَالَّنارُ مَثْوَا لَّهُمْ  ‘যারা আল্লাহর বিধানকে অস্বীকার করেছে তারা খুব ফুর্তি করছে এবং জীব জানোয়ারের মত পানাহার করছে। তাদের শেষ ও চিরস্থায়ী ঠিকানা জাহান্নাম।’
-সূরা মুহাম্মাদ
     সুতরাং উদর পূজারী, যৌন পিপাসু ও দুনিয়া লোভী দুনিয়ার জীবনে স্বাধীনভাবে মনের সুখে উত্তম পানাহার ও আমোদ ফুর্তির আমল নিয়ে যখন আপন মালিকের দরবারে উপস্থিত হবে, তখন কুফুরীর বিনিময়ে জাহান্নামের আগুন এবং সুস্বাদু পানাহারের বিনিময়ে কাঁটাযুক্ত ঘাস, ফুটন্ত পানি, ঘৃণিত নাপাক রক্ত ও পুঁজ দ্বারা তাদেরকে আপ্যায়ন করা হবে। মনে রাখতে হবে, কাফেরদের জন্য জাহান্নামের আযাব চিরস্থায়ী। অন্যান্য ভীতিকর আযাবতো আছেই। সাথে সাথে মুসলমানদের জন্যও হালাল হারামের পার্থক্য না করার কারণে জাহান্নামের বিভীষিকাময় শাস্তি এবং পীড়াদায়ক পানাহারের কথা কুরআন ও সুন্নাহর দ্বারা প্রমাণিত। যেমন, ইয়াতিমের মাল আত্মসাৎকারী বা ভক্ষণকারীদের জন্য সুস্পষ্টভাবে কুরআনে কারীমের আয়াত প্রমাণিত। আল্লাহ পাক বলেন,إن الذين يئكلون أموال اليتمى ظلما إنما يئكلون في بطونهم نارًا     ‘নিশ্চয় যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতিমদের মাল ভক্ষণ করে বা আত্মসাৎ করে অবশ্যই তারা নিজের পেটে জ্বলন্ত আগুন প্রবেশ করায় এবং তাদেরকে অবশ্যই জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।’  (সূরা নিসা)
     এমনিভাবে মদ পানকারীদের সম্পর্কেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, জাহান্নামীদেরকে তাদের দেহ থেকে নির্গত ঘাম পান করানো হবে। মুসলিম।

মুসনাদে আহমদের এক বর্ণনায় এসেছে যে, ব্যভিচারী নারী-পুরুষের লজ্জাস্থান থেকে প্রবাহিত কদর্য দুর্গন্ধযুক্ত পদার্থ মদপান কারীদেরকে পান করানো হবে। نعوذ بالله من ذلك অতএব, হে ইয়াতীম ও বিধবাদের মাল সম্পদ আত্মসাৎকারী! হে অন্যায় ভাবে অপরের মাল সম্পদ দখলকারী! হে জাতীয় সম্পদ লুন্ঠন কারী! হে জুয়া, চুরি, ঘুষ, সুদ ও অবৈধভাবে উপার্জনকৃত সম্পদ ব্যবহারে আরাম আয়েশকারী! বিলাস বহুল প্রাসাদ নির্মাণকারী! হে মদ ও যৌবনের উত্তাল তরঙ্গে ভেসে যাওয়া রঙ্গ রসে ও বিনোদন আড্ডায় হারিয়ে যাওয়া যুব সমাজ! একবার নয় হাজার বার চিন্তা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর। তুমি কী  জাহান্নামে উৎপাদিত যাক্কুম, কাঁটাযুক্ত ঘাস বা অন্যান্য কষ্টদায়ক খাবার খেতে করতে পারবে? তুমি কী কালো কুৎসিত, নাপাক, দুর্গন্ধযুক্ত, অতি ভয়াবহ গরম পানীয় পান করতে পারবে?  فهل من مّدكر   অর্থাৎ, আছো কেউ উপদেশ গ্রহণকারী? হে আল্লাহ! আমাদেরকে বিপর্যস্ত এই অন্ধকার জীবন থেকে রক্ষা করে আলোকিত জীবন দান করুন। আমীন ॥
-চলবে ইনশা আল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন