শিক্ষা-দীক্ষা-২


বালিকা মাদরাসা
লাইলা শামশীর লাভলী

     শিক্ষা-ই জাতির মেরুদণ্ড। মেরুদণ্ড যত সুস্থ হবে শরীর তত শক্তিশালী হবে। শিক্ষা যত আদর্শ-উন্নত হবে জাতি তত আদর্শবান ও উন্নত হবে। শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের রয়েছে সমান অধিকার। এই অধিকার প্রথম নিশ্চিত করেছে ইসলাম। আম্মাজান আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন সব চেয়ে বড় মুফতী-মুহাদ্দিস-মুফাস্সির। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “সকল মুসলমানের (নারী-পুরুষ) উপর জ্ঞান অর্জন করা ফরয।”
     প্রশ্ন হলো- ইসলাম কোন্ শিক্ষা ফরয করেছে? কুরআন-হাদীস-ফিক্হসহ সকল ইসলামী বিষয়? বাংলা-আরবী-উর্দূ-ইংরেজীসহ ইত্যাদি ভাষা? সমাজ-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-ভূগোল-ইতিহাস-চিকিৎসা-অর্থনীতি সহ বিভিন্ন বিষয়? এর সহজ উত্তর হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ইসলাম সর্বজনীন ধর্ম।” তাই ইসলাম জ্ঞানকে কোনো বিশেষায়ন করে নি। এতে প্রমাণিত হয় যেসব বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করলে পৃথিবীবাসীর ইহকাল ও পরকালীন উপকার হবে সেসব বিষয়ের জ্ঞান (যার যতটুকু প্রয়োজন) অর্জন করা ফরয।
     এ দেশে সরকারী-বেসরকারী অনেক মহিলা স্কুল, মহিলা হাই-স্কুল, মহিলা কলেজ ও মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। রয়েছে অনেক মহিলা মাদরাসাও; কিন্তু আদর্শ মাদরাসা ও আদর্শ শিক্ষা-ব্যবস্থার অভাব রয়েছে প্রায় (কয়েকটি মাদরাসা ছাড়া) সবখানেই। এখানে একটি আদর্শ বালিকা মাদরাসার বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো-
     অবস্থানঃ যে কোনো ধরনের প্রধান সড়ক থেকে একটু দূরে সাধারণ পথ বা গলি পথের কাছে হলে ভালো। যেন সামাজিক নিরাপত্তা বলয় বেষ্টিত থাকে।
     ভবনঃ প্রতিষ্ঠানের ভবন এমন হওয়া উচিত যেন ফটকের সাথে অফিস-কক্ষ এবং অফিসের জন্য আলাদা শৌচাগার-অযু ও গোসলখানার ব্যবস্থা থাকে। করিডোর দিয়ে যেন নির্ভিঘেœ চলা-ফেরা করা যায়। থাকতে হবে যথেষ্ট পরিমাণ শ্রেণী কক্ষ, শিক্ষক মিলনায়তন, লাইব্রেরী, কম্পিউটার ল্যাব, ছাত্রী মিলনায়তন এবং একটি আদর্শ রান্নাঘর। সম্পূর্ণ একটি কক্ষে থাকবে শৌচাগার এবং এর পাশের কক্ষে থাকবে অযু-গোসলের ব্যবস্থা। শিক্ষিকাদের জন্য প্রয়োজন মতো এটাচবাথ থাকবে। কোনোভাবেই যেন কোনো নাপাকী শৌচাগারের বাহিরে না আসতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। স্থানাভাবে একই কক্ষে একাধিক কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব, এমন একাধিক বিষয় এক কক্ষে রাখা যায়। ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠান করলেও (সম্ভব হলে) এসব দিকে খেয়াল করে ভাড়া নেয়া অথবা যতদূর সম্ভব ব্যবস্থাপনা উন্নত করার চেষ্টা করতে হবে।
     সিলেবাসঃ বিজ্ঞান-প্রযুক্তির এ যুগে তথ্য-প্রযুক্তিতে অভিজ্ঞ; ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষায় প্রবিজ্ঞ; প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ; সুরুচিপূর্ণ ইসলামী জীবন-যাপন যাদের লক্ষ্য- তাদের নিয়ে একটি ফলপ্রসূ সিলেবাস তৈরী করা বাঞ্ছনীয়। যে সিলেবাসে উত্তীর্ণ একটি ছাত্রীর নিচের গুণগুলো অর্জন হবে-
১.কুরআন-হাদীস-ফিকহের প্রভূত জ্ঞান।
২.বাংলা-ইংরেজী-আরবীতে রচিত যে কোনো বই-পুস্তক পড়তে পারা। এই তিনটি ভাষায় যে কোনো বিষয়ে লিখতে ও বলতে পারা।
৩.বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে ঈর্ষণীয় সফলতা অর্জন।
৪.হস্ত-শিল্পকর্ম শিখে ঘরে বসেই হালালভাবে অর্থ উপার্জন।
৫.ইসলামের সুন্দর শিক্ষা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার যোগ্যতা অর্জন।
     শিক্ষক-শিক্ষিকাঃ সিলেবাস অনুযায়ী উপযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করতে হবে। সম্ভব হলে যোগ্য শিক্ষিকা দ্বারা-ই ক্লাস চালানো ভালো। মনে রাখতে হবে অনুপযুক্ত ব্যক্তি দ্বারা কোন প্রতিষ্ঠানই সফলতা অর্জন করতে পারে না। এতে নষ্ট হয় প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছাত্র/ছাত্রীর জীবন; নষ্ট করা হয় তাদের (অধিকার) হক। প্রতারণা করা হয় তাদের অভিভাবকের সাথে। অভিভাবক তার ফলাফল শূন্য আলেমা(?) মেয়েকে নিয়ে হাপিত্যেশ করা ছাড়া কিছুই করতে পারেন না। উপরে বর্ণিত কোনো যোগ্যতাই যে তার অর্জিত হয় নি! তাই একটি আদর্শ বালিকা মাদরাসার জন্য রুচিশীল-দায়িত্বশীল-প্রজ্ঞাবান শিক্ষক-শিক্ষিকা অতীব জরুরী।
     শিক্ষা ব্যবস্থাঃ যেহেতু মহিলা মাদরাসার কোন জাতীয় শিক্ষাবোর্ড গঠিত হয় নি। তাই যে বিষয়গুলো মাদরাসার সিলেবাসে থাকবে তা যেন পরিপূর্ণভাবে ছাত্রীদের বোধগম্য হয় সেদিকে খেয়াল রেখে (বোর্ড-চক-মার্কার-ডাস্টারসহ) প্রয়োজনীয় যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সিলেবাসের কোন সবকের কোন অংশ এমনকি একটি শব্দও যেন বুঝানো থেকে বাদ না পড়ে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিমাসে এক বা একাধিক পাঠ-মূল্যায়ন মিটিং করে পড়া-শোনার নিয়মিত মান নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে আগামী মাসে কোন শিক্ষক/শিক্ষিকা কোন বিষয় কতটুকু পড়াবেন তার শীট তৈরী করিয়ে প্রধান শিক্ষক ফাইল বন্দি করে রাখতে পারেন।
     সংস্কৃতিঃ ইসলামী সভ্যতা হলো বিশ্ব নন্দিত সভ্যতা। রুচিশীল ও বিজ্ঞানসম্মত সভ্যতা। যে সভ্যতা-চর্চায় দেহ-মন পুলকিত হয়; আত্মার শুদ্ধি হয়; সামাজিক অনাচার- অবিচার-ব্যভিচার দূর হয়; পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র সুখে ভরপুর হয়; তাকেই ইসলামী সংস্কৃতি বলা হয়। নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাত-ঈদ-কুরবানী-জানাযা-কবর ইত্যাদি ইবাদাত; তিলাওয়াত-না‘ত-হামদ-সংগীত এই সব কিছুর বাস্তবমুখী শিক্ষাই হলো মাদরাসা সংস্কৃতি।
     অভিভাবক সম্মেলনঃ এক শিক্ষাবর্ষে নিয়ম করে অন্তত তিনটি অভিভাবক সম্মেলনের আয়োজন করা। যাতে তুলে ধরা হবে পরীক্ষার ফলাফলসহ মাদরাসার যাবতীয় কার্যক্রম, বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি। একটি আদর্শ বালিকা মাদরাসার গুণাগুণ এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে এর বর্ণনা শেষ করা সম্ভব নয়। আল্লাহ সবাইকে সুমতি দান করুন। আমীন ॥
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন