পরশ পাথর-২


লোভের পরিণাম 
তাহিয়া তাসনীম

     হযরত মূসা আলাইহিস সালামের মিশর বিজয়ের সময় জাব্বারীন গোত্রে এক আল্লাহর ওয়ালী ছিলেন। যবরদস্ত বুযুর্গ। তিনি ইসমে আজম জানতেন। ইসমে আজম পড়ে তিনি যে দু‘আ করতেন সে দু‘আই আল্লাহ কবুল করতেন। বিফলে যেতো না তাঁর কোন দু‘আই। নাম তাঁর বাল‘আম ইবন্ বা‘উরা।
     মিশর বিজয়ের পর হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ও বনী ইসরাঈলের উপর জাব্বারীনদের বিরুদ্ধে জিহাদের আদেশ হয়। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম বনী ইসরাঈলের বিরাট বাহিনী নিয়ে চললেন জাব্বারীনদের দিকে। মূসা নবীর বিরোধিতা করতে গিয়ে ফিরাউনের সদল বলে দরিয়ায় ডুবে মরার কথাও পৌঁছে গিয়েছিল তাদের কাছে। তাই তারা ভীত-বিহ্বল হয়ে গেল বাল‘আম ইবন্ বা‘উরার কাছে। বললঃ
-“মূসা অতি কঠিন লোক, তার সাথে রয়েছে বিপুল সেনাও। আপনি আল্লাহর কাছে দু‘আ করুন যেন তিনি তাদেরকে ফিরিয়ে দেন।”
- “একি বলছ তোমরা! সর্বনাশ!! তিনি আল্লাহর নবী; তাঁর মর্যাদা সম্পর্কেও আমি জানি। তাঁর সাথে রয়েছে আল্লাহর ফেরেশতা। তাঁর বিরুদ্ধে কিভাবে বদ-দু‘আ করতে পারি; আমার দুনিয়া-আখিরাত সব ধ্বংস হয়ে যাবে।” বললেন তিনি।
-“হুজুর! বিষয়টি দেখুন” ইত্যাদি বলে সমাজের প্রভাবশালী লোকেরা তাঁকে পীড়াপীড়ি করতে লাগল।
-“আচ্ছা তাহলে আমি আল্লাহর কাছে জেনে নেই; এ ব্যাপারে দু‘আ করার অনুমতি আছে কি-না?” তাদের পীড়াপীড়িতে তিনি বললেন।
     তিনি ইস্তিখারা করলেন। স্বপ্নে তাকে জানিয়ে দেয়া হল; তিনি যেন এমন কাজ কখনো না করেন। পরের দিন লোকেরা আবারও আসল। বললঃ
-“হুজুর! আপনি কি জেনেছেন?”
-“বদ-দু‘আ করতে আমাকে বারণ করা হয়েছে।” বললেন তিনি।
     তখন তারা তাঁকে একটি লোভনীয় উপহার দিল। তাঁর স্ত্রীকেও দিল বিরাট উপহার। প্রকৃতপক্ষে এগুলো ছিল উৎকোচ বিশেষ। যখন তারা এগুলো গ্রহণ করে নিল, তখন সম্প্রদায়ের লোকেরা তাঁর পেছনে লেগে গেল এবং চাপ প্রয়োগ শুরু করল। দুনিয়ার মোহে পরে টোপ যখন গিলেছেন তখন আর দু‘আ না করে উপায় কি? তখন তিনি মূসা নবীর বিরুদ্ধে বদ-দু‘আ শুরু করে দিলেন।
     যখন তিনি বদ-দু‘আ করতে শুরু করলেন, তখন হল কি? তিনি যে দু‘আ মূসা আলাইহিস সালামের বিরুদ্ধে করছিলেন এর সব বাক্য তাঁর সম্প্রদায়ের প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে উচ্চারিত হয়ে যাচ্ছিল। তারা বলতে লাগল, “আপনি যে সব বদ-দু‘আ আমাদের বিরুদ্ধে করছেন!” তিনি বললেন, “এটা আমার ইচ্ছাকৃত নয়; আমার জিহ্বা যে তোমাদের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে।”

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন