দারসুল কুরআন

সূরা ফাতিহাহ্
মাওলানা নাযিমুদ্দীন
[পূর্ব প্রকাশিতের পর]

     إهدنا الصراط المستقيم* ‘তুমি আমাদের সোজা পথ দেখাও।’ আমরা প্রতিদিন প্রতি নামাযের প্রতি রাকাতে এই দু‘আ করি। হিদায়াতের সর্বোচ্চ মাকাম কামনা করি। هداية (পথ প্রদর্শন) দু‘টি অর্থে ব্যবহৃত হয়। ১.إرائة الطريق ‘শুধু কাক্সিক্ষত পথ দেখিয়ে দেয়া।’ ২.ألإيصال إلى المطلوب ‘কাক্সিক্ষত লক্ষ্যস্থলে পৌঁছিয়ে দেয়া।’ আমরা তাঁর কাছে দ্বিতীয় স্তরের হিদায়াত কামনা করি। তিনি তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ডাক দিয়ে বলেন, على صراط مستقيم ‘হাবীব! আপনি সোজা পথে রয়েছেন।’ এতে প্রতীয়মান হয়, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে পথে চলেছেন, যে পথ আমাদের দেখিয়েছেন তাই হলো সোজা পথ। 
     صراط الذين أنعمت عليهم* ‘তাদের পথে পরিচালিত করো; যাঁদের তুমি নিয়ামত দান করেছো।’ তিনি যাঁদের নিয়ামত দান করেছেন তাঁদের একটি তালিকাও পেশ করেছেন পবিত্র কুরআনে। ইরশাদ করেছেন, أنعم الله عليهم من النبيين والصديقين والشهداء والصالحين ‘আল্লাহ পাক নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎ বান্দাগণের উপর নিয়ামত দান করেছেন।’ এই আয়াতে আল্লাহ নিয়ামতপ্রাপ্তদের চারটি স্তর বর্ণনা করেছেন। ১.নবীগণ। নবীদের মধ্যে সবচে বেশি নিয়ামত পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁর হাতের ইশারায় চাঁদ দু‘টুকরো হয়েছিল। বেহেশতের চাবি থাকবে তাঁর হাতে। জুতো মোবারকসহ আরশে মহল্লায় সফর করেছেন। তাঁর পরে অন্যান্য নবীগণ। ২.সিদ্দীক। সিদ্দীকগণের শিরোমণি হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু। যাঁর ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন, ثاني اثنين إذهما في الغار ‘যখন তাঁরা গারে ছওরে ছিলেন তখন সিদ্দীকে আকবর রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন দু জনের একজন।’ মদিনা হিজরতের পথে গারে ছাওরে আশ্রয় নেয়ার প্রেক্ষিতে এই আয়াত নাযিল হয়। এতে বুঝা যায় তিনি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কত বড় অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন। তিনি কোনো প্রশ্ন করা ছাড়াই মি‘রাজের ঘটনা বিশ্বাস করেছিলেন। ৩.শহীদ। যাঁরা আল্লাহর পথে নিজ জীবন কুরবান করেছেন তাঁদের শহীদ বলা হয়। হযরত হামযাহ্, ওমর, ওসমান, আলীসহ অসংখ্য সাহাবী শহীদ হয়েছেন। শহীদের এই ধারা কিয়ামত পর্যন্ত বাকী থাকবে। ৪.সৎবান্দা। যাঁরা কুরআন ও হাদীস মোতাবেক জীবন-যাপন করে তাঁদেরকে সৎবান্দা বলা হয়। এসব বান্দাদের আল্লাহ নিয়ামত দান করেছেন। غير المغضوب عليهم ولاالضالين* ‘তাদের পথে নয়, যারা তোমার গযবের উপযুক্ত আর যারা সীমালঙ্ঘনকারী।’ মুফাসসিরীনে কিরামের মতে ‘মাগদূব’ দ্বারা ইহুদী এবং ‘দ্বাল্লীন’ দ্বারা খৃষ্টান উদ্দেশ্য। আমরা সকল কাফির-মুশরিক ও তাদের দোসরদের পথ থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।
     أمين* ‘তুমি কবুল করো, আল্লাহ!’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন